
গত কয়েক মাস ধরে দিল্লিতে যে মুসলিম-বিরোধী হিংসাত্মক নৃশংসতা চলছে তাতে প্রাণহানির ঘটনা রেকর্ড সংখক রূপ নিয়েছে দিল্লিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৮ জন। নিহতদের মধ্যে ২২ বছর বয়সী অটোরিকশা চালক শহীদ-এর সোমবার দুপুর সাড়ে ৩ টার দিকে তার পেটে গুলি লাগে । তিনি গর্ভবতী স্ত্রী শাজিয়াকে রেখে অটোরিকশা নিয়ে রোজগার এর উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়েছিলেন। মাত্র চার মাস আগে তাঁদের বিয়ে হয় ।
নিহতদের মধ্যে আরেকজন ছিলেন ৮৫ বছর বয়সী আকবরী, তাকে পুড়িয়ে মারা হয় এবং, “জয় শ্রী রাম” শ্লোগান দেওয়া কিছু হিংস্র মুসলিম-বিরোধী জনতা তার আশপাশে হামলা চালিয়ে এবং তার প্রতিবেশী এবং তার দোকানপাট এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। প্রথমে বাস ভবনের প্রথম দুটি তলায় আগুনে ধরিয়ে দেওয়া হয় , যার ফলে তিনি পুত্রবধু এবং তিন নাতিকে নিয়ে ছাদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন । তবে আকবরী চড়তে বা দৌড়াতে অক্ষম হওয়ায় তিনি তীব্র ধোঁয়ার মধ্যে আগুনে মারা যান। কয়েক ঘন্টা পরে তাঁর মরদেহ দমকল বাহিনী উদ্ধার করে।
আগুনে ছারখার হয়ে যাওয়া বাড়ি, আহত রক্তাক্ত মানুষের দিগ্বিদিকশূন্য দৌড়, সন্তানহারা মায়ের উথালিপাথালি কান্না। তরতর করে মসজিদের মিনার বেয়ে তার চূড়ায় উঠে যায় তরুণ; লাগিয়ে দেয় গেরুয়া পতাকা। অত্যাচার এবং অবিচারের প্রতিকার হিসেবে আমরা, ভারতের মুসলমান সমাজ, আইনেরই দ্বারস্থ হয়েছি। প্রায় কখনওই আইনের বেড়া ডিঙিয়ে ন্যায় ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করিনি। তাই রায় বিপক্ষে যাওয়া সত্ত্বেও রামমন্দির নিয়ে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ শান্তিপূর্ণ ভাবে মেনে নেওয়ার চিহ্ন দেখা গিয়েছে। আর এখন এই সবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন এবং প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিক পঞ্জি। নাগরিকত্ব হারাবার ভয় তীব্র ভাবে সঞ্চারিত হয়েছে মুসলমান সমাজের মধ্যে। আমরা সংবিধান মেনেই গণতান্ত্রিক পথে প্রতিবাদ আন্দোলনে নেমেছি। আন্দোলনে আমাদের পাশে নেমে এসেছেন অন্য সম্প্রদায়ের বন্ধুজনেরাও।
১২৩টি এফআইআর, আটক ৬৩০, স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে থমথমে রাজধানী।সংঘর্ষের আবহ কেটে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হওয়ার পথে রাজধানীর উত্তর-পূর্ব অংশ। তবে চার দিন ব্যাপী তাণ্ডবের রেশ এখনও রয়ে গিয়েছে বিভিন্ন জায়গায়।আজ না হোক কাল ,বা পরশু দিল্লি স্বাভাবিক হবে খাঁচাগাড়িতে চেপে ঘর ছাড়া মুসলমানদের অনেকেই ফিরে আসবেন আবার পুরোনো আস্তানায়। মনে গোপন ভয় বা অস্বস্তি নিয়ে আবার পুরোনো অবস্থাতে ফিরবে শহর। তবে প্রত্যেবর্তনে কিন্তূ ঢাকা পড়বে না একটা কথা যে ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সূচনা হয়ে গেছে।
