
পশ্চিমবঙ্গের বুকে আমফান প্রাণ কেড়েছে প্রায় কয়েক হাজার সবুজের। স্বাভাবিকভাবেই সবুজের ঘাটতিতে পরিবেশের ভারসাম্য অনেকটাই বিঘ্নিত হতে চলেছে, যার ফলে বাড়তে পারে শ্বাসকষ্টসহ দূষণজনিত বিভিন্ন অসুখ-বিসুখের প্রকোপ। তাই পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণের ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা।
প্রতিনিয়ত নানান বিপর্যয়ের জেরে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা যেমনভাবে বাড়বে, পাশাপাশি ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে শ্বাসকষ্টজনিত, বায়ুবাহিত, এবং দূষণ জনিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। অবস্থার সামাল দিতে গুরুত্ব দিয়ে বৃক্ষরোপণের পরিকল্পনা করতে হবে না হলে ভবিষ্যতে বিপদ আরও ঘনিয়ে আসতে পারে।
কলকাতা শহরে গাছ পড়ে যাওয়ার ঘটনা নতুন নয়। এর আগেও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে গাছ উপড়ে রাস্তা অবরোধ, বাড়ি ভেঙে যাওয়া, মৃত্যুর ঘটনা বহুবার ঘটেছে, এবারেও তার অন্যথা হয়নি। উদ্যানবিদদের মতে, কলকাতা শহরের ফুটপাতে গাছ লাগানোর জন্য যে জায়গা বরাদ্দ আছে , তাতে গাছ বৃদ্ধি পেলেও জায়গার অভাবে শিকড় ছড়াতে পারে না। অনেকসময় নির্মাণের কাজে খোঁড়াখুঁড়ির জন্য শিকরের অংশ কাটা পড়ার সঙ্গে মাটিও কমতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই গাছের ভিত আলগা হয়ে যায়। এছাড়াও গাছগুলিকে নূন্যতম দূরত্বে রোপণ না করার ফলে গা ঘেষাঘেষি করে বাড়তে থাকে তাই অল্প ঝড় বৃষ্টি হলেই তারা উপড়ে যায়। শহরে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কোন গাছগুলি শিকড় গভীরভাবে ছড়াতে পারে। বট, কৃষ্ণচূড়া, অশ্বথ গাছগুলির শিকড় মাটির খুব গভীরে যেতে পারে না।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের ট্যাক্সোনমি শাখার অধ্যাপক দেবব্রত মাইতির মতে, ছাতিম, মেহগনি, আম, কাঠ বাদাম, কাঁঠাল, জামরুল ইত্যাদি গাছ লাগানো যেতে পারে। এছাড়াও পুকুর ও খালপাড়ে ম্যানগ্রোভ, সুন্দরী, বোলা ও হাবলি গাছ লাগানো যেতে পারে। ভবিষ্যতে শহরে গাছ লাগানোর আগে ট্যাক্সোনমিস্ট ও উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। উদ্যানবিদেরা বলেছেন, ঝড়ে পড়ে যাওয়া গাছের বয়সের উপরও নির্ভর করে। কলকাতার বেশিরভাগ গাছের বয়স প্রায় ১০০ বছরের বেশি। তাই স্বাভাবিকভাবেই তারা দুর্বল। এছাড়াও রাস্তার ধারে গাছ রোপণের জন্য দুটি গাছের মধ্যে অন্তত ১৫ ফুট দূরত্ব ও দেড় থেকে দু’ফুট গর্ত করা প্রয়োজন।
পরিকল্পনামাফিক ভাবে নির্দিষ্ট দূরত্ব ও বেড় পরিমাপ করে বিশেষ গাছ শনাক্ত করে রোপণ করা দরকার। এইভাবে কিছুটা হলেও পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব হতে পারে।
