
আমফানের জেরে জলের তলায় তলিয়ে গেল বইপাড়ার নস্টালজিয়া। কলেজ স্ট্রিটের বই ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত। একেই লকডাউনের ফলে লোকসান হচ্ছিল, তার ওপর আমফান যেন গোঁদের ওপর বিষফোঁড়া। কোটি কোটি টাকা লোকসানের মুখে বইপাড়ার বিক্রেতা। ২১ শে মে থেকে বইয়ের দোকান খোলার কথা ছিল কিন্তু তার আগেই প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জল জমে নষ্ট হয়ে গেল প্রচুর বই।
প্রত্যেক বছর বর্ষায় কলেজস্ট্রিট চত্বরে জল জমলেও প্রয়োজনীয় বই আগে থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এবার লকডাউনের জন্য দু’মাস রোজগার হয়নি ঠিকই কিন্তু ব্যবসায়ীদের মতে তা আগামী দু-তিন মাসের মধ্যে সামলানো যেতে পারত, বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সে গুড়েও বালি। একেবারে নিঃস্ব করে দিল তাদের। তালা বন্ধ দোকানে জল ঢুকে বইগুলোর এমন অবস্থা যে শাটার কেটে বের করতে হচ্ছে। অনেকের আবার দূরে বাড়ি হওয়ার কারণে দোকানের অবস্থা দেখতেও আসতে পারছেন না। লোকমুখে শুনে হতাশায় দিন কাটছে তাঁদের।
চলতি শিক্ষাবর্ষের শুরুতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ব্যবসায়ীদের তোলা বইয়ের প্রায় বেশিরভাগই জলে নষ্ট হয়ে গেছে। এর জেরে রাজ্য জুড়ে পাঠ্য, সহায়িকা বই সরবরাহে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। অনেক ছোট-খাটো বইয়ের ব্যবসায়ীরা পুঁজির কারণে ঋণ নিয়েছিলেন। বিক্রির পর তা শোধ দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথটাও বন্ধ হয়ে গেল।বই বিক্রি করে তাদের সংসার চলে ,বইপাড়াই তাঁদের জীবন ও জীবিকা।
কলেজ স্ট্রিটের চেনা চিত্রের জায়গায় এখন শুধুই চারপাশে ছড়িয়ে আছে ভিজে ন্যাতা হয়ে যাওয়া বই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে জলমগ্ন রাস্তায় ভেসে বেড়ানো বইয়ের ছবি। নষ্ট হয়ে যাওয়া বইগুলোকে কাগজের দরে বিক্রি করা ছাড়া আর কোন উপায় দেখছেন না বই বিক্রেতারা।
দেজ পাবলিশার্স এর সুদীপ্ত দে বলেন, “লক্ষ লক্ষ টাকার বই বৈঠকখানায় বাধানোর জন্য গিয়েছিল সেই দোকানগুলো সব নিচের তলায়, সেখানেও জল জমেছে। কর্মীরা না আসতে পারায় আমরা জানতেই পারছি না সেই বইগুলোর কি অবস্থা।” পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ডের শীর্ষস্থানীয় সদস্য এবং দেজ পাবলিশিং এর কর্ণধার অপু দে’র বক্তব্য অনুযায়ী- ‘পাবলিশিং ইউনিট এবং দোকানের ভেতর জল জমে ছাপা বইয়ের প্রায় কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়ে গিয়েছে এর ওপর আবার বই বাঁধানোর ইউনিটে জল ঢুকে সব মিলিয়ে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি লোকসান হয়েছে’।
বই প্রকাশক এবং বিক্রেতাদের শীর্ষ সংগঠন শীঘ্রই এ ব্যাপারে বৈঠকে বসবেন এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার পেতে মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানাতে চলেছে পাবলিশার্স অ্যান্ড বুক সেলার্স গিল্ড।
By, Aanchal Mukherjee
