
বিশ্ব করোনা সংক্রমণে সংক্রমিত বহু মানুষ। উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা। এই পর্যন্ত বাংলাদেশে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৮০,৫২, মৃত ১,০৪৯। এরই মাঝে মারণ রোগকে জয় করে আশার আলো দেখালেন বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের ১০১ বছরের বৃদ্ধা খবিরুন্নেসা। ত্বকের ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো করোনা থাবা বসায় তাঁর শরীরে। তবে এই মারণ রোগ তাঁকে হারাতে পারেনি। করোনা জয় করে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন তিনি।
গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার চন্দ্রদিঘলীয়া গ্রামের বাসিন্দা আলতাফ ভূইয়ার স্ত্রী হলেন এই বৃদ্ধা। যদিও তাঁর স্বামী ২০ বছর আগেই পরলোক গমন করেছেন। তিনি বর্তমানে মেয়ে সেলিনা জাকিরের বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। মায়ের সঙ্গে তিনিও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনায়। জানা গেছে, ত্বকের ক্যান্সার, হৃদরোগসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত খবিরুন্নেসা। তাঁর চার ছেলের মধ্যে বড় ছেলে দুই বছর আগে মারা গেছেন আর বাকি তিন ছেলে থাকেন আমেরিকাতে। আর দেশে আছেন তিন মেয়ে। আপাতত তিনি মেয়েদের কাছেই থাকেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত মাসে শুরুর দিকে ঢাকায় মেয়ের কাছে যান। গত ১৩ মে তাঁর মেয়ে সেলিনা জাকির (৪৮) ও নাতির করোনা পজিটিভ আসে, ভর্তি করা হয় ঢাকার উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে। সেখানে করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসায় ১০১ বছরের বৃদ্ধার শরীরে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। ১৯ মে খবিরুন্নেসার করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসে। পরে ঢাকার রিজেন্ট হাসপাতালে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে তাঁকেও ভর্তি করা হয়।
এ ব্যাপারে খবিরুন্নেসার মেয়ে সেলিনা জাকির বলেন, “আমরা চারজনই করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলাম। আমার মাকে হৃদরোগের কারণে রিং পরাতে হয়েছিল। একবার পিত্তথলিতে পাথর হওয়ায় অপারেশনের টেবিলেও নিতে হয়েছিল। এরপর তিনি আবার স্কিন ক্যান্সারেও ভুগছেন। এত কিছুর রোগের মাঝে যে তিনি করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করে বাড়ি ফিরেছেন তাতে আমরা খুব খুশি”।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে বলেন- “খবিরুন্নেসা বাংলাদেশের হাজার হাজার রোগীর জন্য অনুপ্রেরণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। নিঃসন্দেহে এটি একটি বিরল ঘটনা। প্রতিনিয়ত করোনা যে তার গতি-প্রকৃতি পাল্টাচ্ছে এটিই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। করোনার সংক্রমণের আতঙ্কের পাশাপাশি করোনায় সংক্রমিতদের চিকিৎসার ফলে সুস্থ হওয়ার সংখ্যাটাও ক্রমশ বাড়ছে। তাই অযথা আতঙ্কগ্রস্থ না হয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে”।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছিল, করোনার সংক্রমণের বেশি ঝুঁকি রয়েছে প্রবীণদের। তবে এক্ষেত্রে ১০১ বছরের বৃদ্ধা করোনাকে জয় করে বুঝিয়ে দিলেন যে কোনও বয়সের লোক আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ হওয়া সম্ভব ।
