
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সহায়তায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গঠিত হল পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের প্রথম প্লাজমা ব্যাঙ্ক। উদ্বোধন করলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন থেকে গত ৬ জুলাই, সোমবার রাজ্যের প্রথম প্লাজমা ব্যাংক ডিজিটাল পদ্ধতিতে উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এর ফলে রাজ্যের করোনা যুদ্ধে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।’ শুধু তাই নয়, মহামারী নিয়ে গবেষণাকেন্দ্র-সহ উৎকর্ষ কেন্দ্র স্থাপন, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে প্রতি বছর ৬টি নতুন পদ সৃষ্টি ও বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালের পরিকাঠামো আরও উন্নত করা হবে বলেও ঘোষণা করেন তিনি।
বাংলায় প্রথমবার পরীক্ষামূলকভাবে প্লাজমা থেরাপির জন্য প্রস্তুত এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিক্যাল কলেজ। প্লাজমা থেরাপি হল যেসব মানুষ করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের রক্তে যে অ্যান্টিবডি তৈরী হয়, তা দিয়েই অন্য করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করার পদ্ধতি।সচিবালয়ে আয়োজিত একটি সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, “রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ইমিউনোহেমাটোলজি বিভাগে (Kolkata Medical College and Hospital’s Immunohematology) একটি প্লাজমা ব্যাঙ্ক তৈরি করেছে”।
এই প্লাজমা থেরাপি শুরু করার জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের অনুমতি পৌঁছে গিয়েছে। গত ৬ জুলাই, সোমবার কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ শুরু করল প্লাজমা গ্রহণ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, এদিনই ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ করোনা-মুক্ত দুই দাতার শরীর থেকে প্লাজমা গ্রহণ করেছে। পূর্ত দফতর ইতিমধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের গ্রিন বিল্ডিং-এ ব্লাড ব্যাঙ্কে প্লাজমা গ্রহণের জন্য নতুন ওয়ার্ড নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।
- করোনা প্রতিষেধক তৈরির দৌড়ে ভারতের সাতটি ওষুধ নির্মাতা সংস্থা, দিল্লির এইমস-এ শুরু হল মানব দেহে কোভ্যাক্সিন-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ
- প্রথম দশে আল আমীন মিশনের ৯ জন পড়ুয়া, উচ্চমাধ্যমিকে চমকপ্রদ ফলাফল
জানা যাচ্ছে, রক্তদাতা নির্বাচনে বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে। সেই পরীক্ষার পর যদি দেখা যায়, রক্তদাতারা সক্ষম এবং পরীক্ষার ফলাফল সঠিক, তাহলেই প্লাজমা যন্ত্র মারফত সংগ্রহ করা হবে। মেশিনে রক্ত থেকে প্লাজমা আলাদা হয়ে যায়। সেই রক্ত পুনরায় রোগীর শরীরে ফিরে যাবে। ফলে দাতার শরীরে রক্তের অভাব হতে পারে, সেই সমস্যা হবে না; জল খেলেই সেই শূন্যতা পূরণ হয়ে যাবে। সাধারণত রক্ত দিতে যদি দশ মিনিট সময় লাগে, তবে এ ক্ষেত্রে সময় লাগছে ঘণ্টাখানেক।
এ বিষয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ব্লাড ট্রান্সফিউশনের অধ্যাপক ডাঃ প্রসূন ভট্টাচার্য বলেন, “করোনা-মুক্ত শরীরে যে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে, সেই অ্যান্টিবডি সবচেয়ে বেশি থাকে রক্তরসে (প্লাজমা) অর্থাৎ রক্তের জলীয় পদার্থের মধ্যে। তাই সুস্থ হয়ে ওঠার ২৮ দিন পর রোগীর দেহ থেকে সংগ্রহ করা হবে প্লাজমা। তবে এক্ষেত্রে আইসিএমআর-এর নির্দিষ্ট গাইডলাইন মেনে কাজ করতে হচ্ছে। অ্যান্টিবডি সমৃদ্ধ প্লাজমা করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীকেও করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে সাহায্য করবে। মেডিক্যাল কলেজের তরফে ইচ্ছুক দাতাদের বাড়ি থেকে সমস্ত রকম সুরক্ষা দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে। সমস্ত রকম পরীক্ষা করে প্লাজমা সংরক্ষণ করার পর দাতাকে ফের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
পশ্চিমবঙ্গের এই প্লাজমা ব্যাঙ্কটি রাজ্যের মধ্যে প্রথম এবং দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। সম্প্রতি দিল্লির লিভার অ্যান্ড বিলিয়ারি সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট (আইএলবিএস) -এও একটি প্লাজমা ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। ধীরে ধীরে এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিক্যাল কলেজ হয়ে উঠেছে করোনার জন্য অত্যন্ত নিরাপদস্থল। ভবিষ্যতে মেডিক্যাল কলেজকে আরও ভরসার জায়গায় নিয়ে যাওয়ার কথাও বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
