নিজের জীবনকে বাজি রেখে নিরলস পরিশ্রমে যারা প্রতিনিয়ত করোনার বিরুদ্ধে লড়ছেন- তাঁদের কথা ভেবে বড় ঘোষণা করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ করোনার মারণ থাবার আঘাতে কোনো বীর যোদ্ধা প্রাণ হারালে সেই পরিবারের পাশে দাঁড়াবে রাজ্য সরকার। করোনা মোকাবিলায় নিযুক্ত রাজ্য সরকারি কর্মীদের কেউ করোনা আক্রান্ত হলে এক লক্ষ টাকা এবং মারা গেলে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। বুধবার, রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় যুক্ত হল চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত। পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি কোভিড-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে মানপত্র এবং মেডেলও দেবে রাজ্য।
করোনা মোকাবিলা করতে পুলিশ, চিকিৎসক, নার্স, সরকারি কর্মী-আধিকারিক প্রমুখরা দিনভর বিরামহীন পরিষেবা দিচ্ছেন। তথ্য সূত্রে খবর, এখনও পর্যন্ত মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১২ জন সরকারি কর্মী, আক্রান্ত ৪১৫ জন। তবে এখন ৪০৩ জন সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ২৬৮ জন পুলিশকর্মী, ৩০ জন চিকিৎসক, ৪৩ জন নার্স, ৬২ সরকারি আধিকারিক–কর্মী রয়েছেন। করোনায় মৃত সরকারি কর্মীর পরিবারের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার প্রসঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এটা স্পেশাল একটা স্কিম। অর্থসচিবের অধীনে থাকবে। মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব এটির দেখভাল করবেন। কোভিডের কাজ করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তাঁর পরিবারের এক জনকে সরকার চাকরি দেওয়া হবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবে।’’ করোনায় মৃত সেই পরিবারের সদস্যকে যোগ্যতা অনুসারে চাকরি দেওয়া হবে। কোন্ পদ্ধতিতে নিয়োগ–প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে, ঠিক করবে অর্থ দপ্তর।
এদিনের ভিডিয়ো বৈঠকে ১৪টি জেলা প্রশাসনকে মৃতদের পরিবারকে ‘অফার অব অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ইতিমধ্যেই ২৮৪ জন আক্রান্তকে এক লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। আরও ১১৯ জনের টাকা শীঘ্রই পৌঁছবে। ১২ জন মৃতের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। এই খাতে সব মিলিয়ে ৫ কোটি ২৩ লক্ষ টাকা খরচ করেছে সরকার।
- মাধ্যমিকের ফলাফলে প্রথম দশে আল-আমীন মিশনের ২ জন কৃতী ছাত্র, সিবিএসই দ্বাদশ শ্রেনীর ফলাফলেও চমকপ্রদ ফল
- বাংলাদেশে করোনা নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমলেও শনাক্তকরণের হার ঊর্ধ্বমুখী
এদিন নবান্ন থেকে কোভিড-যোদ্ধাদের মানপত্র এবং মেডেল দেওয়ার কর্মসূচির সূচনা করা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “কোভিড-যোদ্ধাদের সম্মান জানাতে মানপত্র ও ব্যাজ দেওয়া হবে। সেই ব্যাজ তাঁরা পরতে পারবেন, যেমন পুলিশ বা সেনা জওয়ানরা পরেন।’’ নবান্ন সভাঘরে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় মুখ্যমন্ত্রী আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্য পুলিশের ডিজি বীরেন্দ্র, কলকাতার নগরপাল অনুজ শর্মা, স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের হাতে এই পদক তুলে দেন। মুখ্য সচিব রাজীব সিন্হা বলেন, ‘এই মানপত্র এবং মুখ্যমন্ত্রী–পদক জেলায় জেলায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’ এদিন কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা–সহ ১৪টি জেলার জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপার ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন। জেলাশাসকেরা ‘আশা’কর্মী–সহ কয়েকজন কোভিড–যোদ্ধার হাতে মানপত্র এবং মুখ্যমন্ত্রী–পদক তুলে দেন।
রাজ্যে দ্রুত বেড়ে চলেছে করোনার সংক্রমণ। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, সংক্রমণ কদিন বাড়বে। টেস্টের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। ট্র্যাকিং, ট্রেসিং বাড়ানো হচ্ছে। ফলে রোগীর সংখ্যা বাড়বে। তবে, আতঙ্কিত হবেন না, টেস্ট বাড়লে করোনা রোগীর সংখ্যা বাড়ে। যারা বাজারে যাচ্ছেন, অফিসে যাচ্ছেন, যেখানেই যান, নিজে সচেতন থাকুন। ১৩ টা জেলা থেকে অনুরোধ করেছিলাম কোভিড ওয়ারিয়র্সদের নাম চিহ্নিত করার জন্য। তারা তালিকা তৈরি করেছে। কোভিড ওয়ারিয়র্সদের মেডেল ও সার্টিফিকেট দিয়ে সম্মান প্রদান করা হবে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, জুলাই ও আগস্ট আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়বে। ফলে করোনা সামলানোর সঙ্গে যুক্তদের কাজের চাপও বাড়বে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জনসংখ্যার নিরিখে বাংলা বড় রাজ্য। কলকাতা ঘন জনবসতি এলাকা।’ করোনা নিয়ন্ত্রণে আমজনতার সচেতনতার উপরে এদিন ফের জোর দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, “বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই দু’টো মাস সংক্রমণ শিখরে উঠবে। ক্লাবগুলোকেও অনুরোধ করব, আপনাদের পাড়াগুলোকে আপনারাই ভাল রাখুন। দেখে রাখুন যাতে সবাই মাস্ক পরেন, বিধি মানেন। পুজো আসছে সামনে। পুজোগুলো করতে হবে তো! তা হলে তো এখন থেকেই ঠিক থাকতে হবে।”
করোনাকে হারিয়ে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিরা চাইলে তাঁদের মারণ ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্ত করা হবে বলেও এদিন জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘করোনা-জয়ীরা কাজ করতে চাইলে কাজে লাগানো হবে।’ সেইসঙ্গে রাজ্যের ১লক্ষ ২৫হাজার হেক্টর জমিতে সেচের জন্য ১৫০০ কোটি টাকা ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পও মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।
আমফান দুর্নীতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ৯৯% ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ টাকা পেয়ে গেছে। তাড়াহুড়োর মধ্যে কোথাও একটু ভুল ভ্রান্তি হয়েছে। আমরা বলেছি যাতে সেগুলো দেখে নিয়ে, যারা সত্যিই পায়নি তাদের দিয়ে দেবে। তিনি আরও বলেন,এই সময় নোংরা রাজনীতি করবেন না। এটা সবার লড়াই। সবাই মিলে লড়তে হবে।’
