
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দুপুর ৩ টের সময় টাস্ক ফোর্সের সঙ্গে বৈঠক করেন। আমফানের কারনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ, প্রাথমিক পরিস্থিতি এবং পুনর্গঠনের রূপরেখা প্রস্তুত করার জন্যই এই বৈঠক। পরিস্থিতি অল্প ঠিক হলেই তিনি নিজেই বিধ্বংসী আমফানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনে যাবেন। এদিন বৈঠকে তিনি বলেন, “রাজ্যে ৭২ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে কলকাতায় মৃত ১৫। মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা সহযোগিতা করা হবে।”
ভয়ানক ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে হাওড়ায় ৭, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৭, পূর্ব মেদিনীপুরে ৬, চন্দননগরে ২, বারুইপুরে ৬, ডায়মন্ড হারবারে ৮, রানাঘাটে ৬ এবং সুন্দরবনের ৪ জন প্রাণ হারান। প্রাথমিকভাবে ৭২ জনের মৃত্যুর খবর বললেও এর সংখ্যা আরও বাড়বে। মৃতদের মধ্যে কেউ গাছ চাপা পড়ে, কেউ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, কেউ বা দেয়াল চাপা পড়ে মারা যান। বিধ্বংসী ঝড়ে চারিদিকে গাছ, বৈদ্যুতিন তার ছিঁড়ে গেছে, এর জেরে বেশ কিছু জায়গা একেবারে বিদ্যুৎ সংযোগহীন হয়ে পড়েছে। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় জল জমে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতিমধ্যেই ঝড় পরবর্তী উদ্ধার কার্য শুরু করে দেওয়া হয়েছে।
এদিন বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী উপকূলবর্তী ও বিপজ্জনক এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে আসা মানুষজনদের উদ্দেশ্যে বলেন “পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর নিজেদের ভিটেয় ফিরে যাবেন। আগে দেখুন ঘরবাড়ি ঠিক আছে কিনা ততদিন আশ্রয়স্থল এই থাকুন।” তাদের ঠিকমত পরিচর্যা হচ্ছে কিনা তিনি খবর নেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কথাও তিনি বলেন।
ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পর্যাপ্ত পানীয় জল বিশেষ করে উত্তর ২৪ পরগনা এলাকায় এবং ঔষধ সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগকে নির্দেশ দেন। এছাড়াও এ সময় সাপে কামড়ানোর উপদ্রবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যেন হয় সেদিকে নজর রাখতে বলেন। কৃষি ক্ষেত্রে, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব জানতে চেয়েছেন তিনি। ৭ দিনের মধ্যে কৃষি উদ্যান পালন সংক্রান্ত যাবতীয় সার্ভে রিপোর্ট জমা দিতে বলেন।
১০০ দিনের কাজে ক্ষয়ক্ষতির মেরামতের ব্যাপারে তিনি রূপরেখা দেন – কোনো জায়গায় রাস্তা মেরামতের জন্য আপাতত ইঁট ফেলে রাস্তায় চলাচল করার কথাও তিনি বলেন। এছাড়াও পুকুর থেকে গাছ এবং আবর্জনা সরানোর কাজে কর্মীদের নিযুক্ত করা যেতে পারে। এর ফলে একদিকে যেমন পুকুর সংস্কার করা হবে অপরদিকে রোজগার করে উপকৃত হবে কর্মী বৃন্দ। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো বিদ্যালয়ের ক্ষতি হয়েছে কিনা তা দেখতে বলেন, এছাড়াও কন্যাশ্রী প্রকল্পের ব্যাপারে খবর নেন তিনি। রাজ্য জুড়ে প্রচুর গাছ উপড়ে পড়ার ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে সেই জন্য গাছ রোপন করার কথাও তিনি বলেন।
তবে এদিন বিভিন্ন দপ্তরকে কড়া ভাবে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন “এমনভাবে কাজ করবেন যাতে তিন বছর যেন হাত না দিতে হয়। অল্প মেরামতের কাজ হলো সবথেকে ফাঁকিবাজের কাজ- এর ফলও স্থায়ী নয়, তাই মজবুত ভাবে সারাই করতে হবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন অপ্রয়োজনীয় খরচ না হয়। দুই মাস ধরে উপার্জন ছাড়াই রাজ্যের খরচ চলছে- সে দিকে সকলের খেয়াল রাখা প্রয়োজন। করোনা মোকাবিলায় হাজার কোটি খরচ হয়েছে কিন্তু আমরা কোনো ক্ষতিপূরণ পাইনি, এবার আরো ক্ষতি হয়েছে- দেখা যাক কেন্দ্র কি দেয়!”
তিনি জানান -কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফোন করেছিলেন তাঁকে, প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে আর্জি জানিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা তহবিল থেকে জরুরি ভিত্তিতে আর্থিক সাহায্যের দাবি করেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর আরজি শুনে আজই প্রধানমন্ত্রী বাংলার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে রাজ্যে আসছেন।
