করোনা ভাইরাসের কবলে সমগ্র বিশ্ব আজ জর্জরিত। এই আগ্রাসী মারণ ভাইরাসের কারণে থমকে গেছে সারা পৃথিবী। গত ৪ মাস ধরে এই অদৃশ্য ভাইরাস থেকে বাঁচতে মানুষ এখন ঘরবন্দি। ভ্রমণে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। তাই করোনার প্রভাবে স্থবির হয়ে পড়েছে পর্যটন শিল্প, এর জেরে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন পর্যটন শিল্পের সঙ্গে জড়িত বহু মানুষের জীবন। সেইসঙ্গে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের পরবর্তী সময়ে মানুষ কিভাবে করোনা আশংকা ভুলে ভ্রমণে বেরোবে তা বলা মুশকিল।
সেই উদ্যোগ নিয়ে বাংলার তিনটি পর্যটন স্টেকহোল্ডারদের অ্যাসোসিয়েশনরা পর্যটন শিল্পকে পুনরায় চাঙ্গা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। অ্যাসোসিয়েশনস ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (টিএএবি), ইস্টার্ন হিমালয় ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন (ইএইচটিটিওএ) এবং হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক (এইচএইচটিডিএন) পর্যটনে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান খাত সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা করার জন্য বৈঠক করেছে।
এ প্রসঙ্গে ইস্টার্ন হিমালয় ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের (ইএইচটিটিওএ) সাধারণ সম্পাদক সন্দিপন ঘোষ বলেছেন- “আমরা এই শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য যাবতীয় অসুবিধার মোকাবিলা করতে একসাথে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করেছি। সরকারী বিভাগ এবং এজেন্সিগুলির কাছে আমরা কিছু সিদ্ধান্ত পেশ করেছি, যাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি আসে এই শিল্পে।”
- বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন কলকাতার উড়ান পরিষেবা, ব্যবসা গোটানোর ইঙ্গিত মালয়েশিয়ার উড়ান সংস্থা এয়ার এশিয়ার
- বিধিনিষেধ শিথিলের মধ্যেই ৩১ শে জুলাই পর্যন্ত লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা, রাজ্যে করোনা সংক্রমণে সুস্থতার হার বেড়ে হল ৬০.৫০ শতাংশ
সমিতিগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সমস্ত ভ্রমণকারী এবং এজেন্টরা ট্রিপের আগেই ভাড়া মিটিয়ে দিলেও পরে লকডাউন এবং মহামারীর কারণে ট্রিপটি বাতিল হয়ে গেছে- এ ক্ষেত্রে তাঁরা এক বছরের মেয়াদ সহ পুরো পরিমাণের জন্য একটি ক্রেডিট নোট পাবেন। শিলিগুড়ির এক ট্র্যাভেল এজেন্ট জানাচ্ছেন “এই পরিস্থিতিতে, আমরা পরবর্তী সফরের সময় ক্রেডিট নোট হিসাবে প্রদত্ত অর্থটিকে সামঞ্জস্য করব।”
কেন্দ্র থেকে মহামারী এবং লকডাউনের জন্য ত্রাণ প্যাকেজ ঘোষণা করা হলেও, পর্যটন শিল্পের জন্য কোনও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। এইচএইচডিডিএন-এর সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেছেন, “আমরা চাই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য উভয় সরকারই আমাদের পরিস্থিতির ওপর নজর দিক এবং আমাদের কিছুটা ছাড়ের ব্যবস্থা করুক ।”
তাদের দাবি অনুযায়ী-
- আগামী দুই বছরের জন্য কর্মীদের বেতন, বিদ্যুৎ সহ প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক সহায়তা
- পরবর্তী দুই বছরের জন্য জিএসটির (GST) মতো বিধিবদ্ধ বাধ্যবাধকতাগুলির সম্পূর্ণ অপসারণ
- ২০১৯-২০২০ থেকে ২০২১ সালের মার্চ অবধি স্টেকহোল্ডারদের জন্য আয়করের ছুটি
- ২৪ মাসের জন্য সুদমুক্ত হারে কার্যকরী মূলধনের সীমা ও ওভারড্রাফ্টের বর্ধন
- এক বছরের জন্য রোড ট্যাক্স মকুব বাণিজ্যিক যানবাহনে বিনামূল্যে বীমা সহ ঐ খাতে ব্যবহার
- যারা হোটেল ইজারা নিয়েছেন তাদের ন্যূনতম ছয় মাসের ইজারা মেয়াদ বাড়াতে হবে।
কেন্দ্রের তরফে এক সিনিয়র আধিকারিকের দাবি, “অনেক রাজ্যের অর্থনীতি পর্যটন শিল্পের উপর দাঁড়িয়ে আছে। তারা পর্যটনের ক্ষেত্রে শিথিলতার আর্জি জানিয়েছেন। তাই মনে করা হচ্ছে, লকডাউনের পঞ্চম দফায় হয়তো এক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় দেবে কেন্দ্রীয় সরকার।”
কিন্তু কীভাবে অল্প পর্যটককে অনুমতি দিয়ে সামাজিক দূরত্ব মেনে এই শিল্পকে লোকসান থেকে বাঁচানো যাবে তা আলোচনা সাপেক্ষ। এক্ষেত্রে পর্যটকদের ঘোরার অনুমতি দেওয়ার আগে অবশ্যই স্বাস্থ্যপরীক্ষা করা হবে সেই সঙ্গে নানা নিয়মবিধি মেনে চলতে হবে পর্যটকদের। তবে শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে রাজ্যগুলির সঙ্গে আলোচনা করেই কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছবে কেন্দ্র। তাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত অনেকটাই নির্ভর করছে রাজ্যের উপর।
Source: The Telegraph
