
দীর্ঘ লকডাউনে থমকে গেছে জনজীবন। জীবিকা হারিয়েছেন বহু মানুষ। করোনা আতঙ্কের থেকেও রোজগারের হতাশায় ভুগছেন অনেকেই। বিপর্যস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা। এরমধ্যে আবার বিধ্বংসী আমফান কেড়ে নিয়েছে শেষ সম্বলটুকুও। ঝড়ে ভেঙে গিয়েছে বাড়ির চাল, জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছে ফলন্ত চাষের জমি। সহায়-সম্বলহীন মানুষ আজ দিশেহারা। একটু খড়ের আশায় হাতড়ে বেড়াচ্ছে অসহায় জীবন।
এমতাবস্থায় অসহায় সম্বলহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এমনই কিছু সহৃদয় ব্যক্তি এগিয়ে এসেছেন অসহায়দের অর্থ সাহায্য প্রদানের জন্য। নিজেদের মতো চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচেষ্টা। তারা জানেন, পাহাড়সম ক্ষতির কাছে এই সাহায্য নিমিত্ত মাত্র। তবুও ন্যূনতম সাহায্যের হাত বাড়ালে তারাও মনে বল পাবেন। এই সময়ের লড়াইটা সবার। তাই সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই শারীরিকভাবে না হলেও মানসিকভাবে সঙ্ঘবদ্ধ হওয়া খুবই প্রয়োজন।
‘দ্য বং গাই’(The bong guy)ওরফে কিরণ দত্ত, যার নাম আজ অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীদের মুখে মুখে ফেরে। ইউটিউব ও ফেসবুক মিলিয়ে প্রায় ৩ মিলিয়ন এর কাছাকাছি চ্যানেলের ভিউয়ার্স। বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গকে আর্থিক সাহায্য করতে উদ্যোগ গ্রহণ এই বঙ্গ তনয়ের। শোনা যাচ্ছে দুস্থদের আর্থিক সাহায্যের জন্য তিনি শীঘ্রই ফেসবুক লাইভে আসছেন। টলিউডের পোস্টার ডিজাইনের কাজে যুক্ত একতা ভট্টাচার্য্য। সুন্দরবন এলাকাকে সাহায্য করতে তিনি খুব কম মূল্যেই ভিজিটিং কার্ড থেকে শুরু করে যেকোনো কিছু তৈরি করতে রাজি আছেন। এ ব্যাপারে একতার বক্তব্য, “একজন শিল্পী হয়ে কখনোই সাহায্যের জন্য হাত পাততে পারিনা কিন্তু আমাদের শিল্পকলাকে বিক্রি করে কিছু টাকা জমিয়ে মাতৃভূমিকে সাহায্য করতে পারি”।
একই রকম ভাবে তরুণ যুবক তৌসিফ হক, পিয়ান, অয়নদ্বীপের মতো জনপ্রিয় শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গের বিপর্যস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে তাদের শিল্পকলাকে কাজে লাগাচ্ছেন। পিছিয়ে নেই তরুণ ফিল্ম মেকার দেবরাজ নাইয়া। সুন্দরবনের সাহায্যের জন্য টাকা দিয়ে তার বানানো ছবি অনলাইনে দেখার জন্য আর্জি জানিয়েছেন। এই সারিতে অবশ্য তরুণ লেখক লেখিকারাও রয়েছেন। ই-বুক হিসেবে নিজেদের নতুন বই প্রকাশ করে সেইখান থেকে রোজগার করা টাকা কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়ায় অনুদান দেবেন। কলকাতার জনপ্রিয় ভয়েস ওভার আর্টিস্ট সুজ্যনীল বন্দোপাধ্যায়ের টক শো এখন ১০০ টাকা করে টিকিট কেটে দেখতে হবে কারণ, এই টাকা দিয়ে তিনি আমফান বিপর্যস্ত এলাকাকে সাহায্য করতে চান। সব মিলিয়ে এখনো অব্দি তাঁর ৬০ হাজার টাকা জমেছে। এদিকে পশ্চিমবঙ্গের সিউড়ির কিছু বেকার যুবকের উদ্যোগে স্বচ্ছল পরিবারের রেশনে পেট ভরছে দুস্থদের। কিছু স্বহৃদয় মানুষ এই যুবকদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। সেইসব রেশন সামগ্রী বিলি করেছেন দুস্থদের।
এই লকডাউনের মধ্যে নিজেদের মতোন করে শিল্প কলাকে বিক্রি করে সেখান থেকে রোজগার করা টাকা বিলিয়ে দুস্থ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর এই অভিনব উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসনীয়।
